রক্ত দিলে কি শরীরের ক্ষতি হয়, নাকি লাভ হয়।

PRADIP
By PRADIP
4 Min Read

রক্তদান রক্ত দিন এবং জীবন বাঁচান। আমাদের জেলায় প্রতিবছর একবার করে রক্তদান শিবিরে আয়োজন করা হয়ে থাকে। বহু মানুষ রক্ত দিয়ে থাকে, কিন্তু আপনি কি রক্ত দেন, আপনি কি ভয় পান রক্ত দিতে? রক্ত দেওয়ার সম্বন্ধে আপনি কি মনে করেন। রক্ত দেওয়া কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নাকি খারাপ? এখন আমরা জানবো এই রক্তদানের ইতিহাস। কিভাবে শুরু হয়েছিল রক্তদান? কিভাবে এই রক্ত একে অপরের জীবন বাঁচিয়েছিল?

Telegram Group Join Now

রক্তদানের ইতিহাস

ইতিহাসের কথা বলতে গেলে ১৫৪২ সালে এটি প্রথম শুরু হয়েছিল ওই সময় এক ব্যক্তি তিনি তার বার্ধক্য থেকে যুবক অবস্থায় ফেরার জন্য তার তিন তরুণ বন্ধুর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে নিজের শরীর প্রবেশ করায়। যার ফলে ওই ব্যক্তি মারা যায়। কিন্তু বলতে গেলে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল। রক্ত ডোনেটের সূত্রপাত।

পরবর্তীকালে ১৬৭৬ সালে এক ফরাসি বিজ্ঞানী এক ব্যক্তির শরীরে ভেড়ার রক্ত প্রবেশ করিয়েছিলেন। যার ফলে ওই ব্যক্তি মারা যান। ওই ফরাসি বিজ্ঞানের উপরে খুনের মামলা আরোপ হয়েছিল। এরপর থেকে বহু বছর এই রক্ত ডোনেট প্রক্রিয়াটি বন্ধ ছিল।

কিন্তু বেশ কিছু বছর পর ১৮১৮ সালে একজন ব্রিটিশ ডাক্তার তার নিজের তৈরি যন্ত্রের মাধ্যমে। একজন রক্তক্ষরণকারী মহিলার শরীরে তার স্বামীর রক্ত প্রেরণ করেন। ফলে ওই মহিলাটি জীবিত হয়ে যায়। এই সফলতা পাওয়ার পর ওই ডাক্তার আরো বহু মানুষের উপর এই পরীক্ষাটি করেন। তবে কিছু মানুষ বেঁচে যায় আবার কিছু মানুষ মারা ও জান। এর ফলে আবার সবাই কিছুটা ভয় পেলেও মানুষের কাছে রক্তের ইতিহাস তখনও কিছুটা অজানা ছিল

পরবর্তীকালে ১৯০১ সালে এক অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসাবিজ্ঞানী তার গবেষণার মাধ্যমে জানান যে। রক্তের তিনটি গ্রুপ রয়েছে প্রথমটি এ, দ্বিতীয়টি বি, তৃতীয়টি সি। এই গ্রুপের রক্ত যদি কোন ব্যক্তির রক্তের সঙ্গে রক্তের সমান মিল থাকে, তবে ওই ব্যক্তি বাঁচবে না হলে মারা যাবে। যার ফলে ১৯৩০ সালে ওই বিজ্ঞানী কে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। বিজ্ঞানীটির নাম হচ্ছে কাল লাঞ্চ স্টেনার।

এই গবেষণার পর আরো দশ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় তারপর ১৯৪০ সালে পুনরায় এক চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলেন যে। রক্তের পজিটিভ নেগেটিভ ভাগ রয়েছে। এটি যদি দুজন ব্যক্তি ব্লাড গ্রুপের সঙ্গে সমানভাবে মিলিত হয় তাহলে কোন রকম কোন সমস্যা ছাড়াই রক্ত ডোনেট করা যাবে।

রক্তদান শরীরের জন্য ভালো নাকি খারাপ

যারা জীবনে প্রথমবার রক্ত দান করেন, তাদের প্রথমবার একটু সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি ভয় কাজ করে। রক্ত দিলে শরীর ক্ষতি হতে পারে, মানুষ শুকিয়ে যেতে পারে, শরীরে শক্তি থাকবে না আসলে এমন কিছুই হয় না। প্রকৃতপক্ষে রক্ত দিলে স্বাস্থ্যের যেমন উপকার হয়, তেমনি অন্যের জীবনও বাঁচানো যায়।

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে জানাচ্ছেন যে যদি কোন ব্যক্তি ক্রমাগতই রক্তদান করে থাকে। তাহলে সেই ব্যক্তি অনেক রকমের ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে দূরে থাকে। পাশাপাশি দেহের মধ্যে নতুন লোহিত রক্ত কণিকার উৎপন্ন হয়। ও শরীরের মধ্যে রক্ত উৎপাদনের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায় ও সক্রিয় থাকে।

কিছু কিছু ব্যক্তির জন্য রক্তদান তো এক ধরনের চিকিৎসা কিংবা ওষুধের মত কাজ করে থাকে। যেসব ব্যক্তির রক্তের আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাদের রক্ত দেওয়া খুবই উপকার হিসেবে প্রমাণিত। ক্রমাগত রক্তদান করলে, অনেক ক্ষেত্রে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, পাশাপাশি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে।

আপনার শরীরের মধ্যে যদি কোন রকম ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, হেপাটাইটিস জনিত কোন রোগ থেকে থাকে। সেটি জানা যায় রক্তদানের মাধ্যমে। ভারতের একটি গবেষণা মাধ্যম থেকে বলা হচ্ছে ভারতবর্ষে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের হাড় বাড়ছে এবং মানুষ স্বেচ্ছায় রক্তদান করছে।

তাই বলবো রক্তদান করতে কোন সময় ভয় পাবেন না। আপনার রক্তে একজন মানুষের জীবন বাঁচাবে, নিজের বাঁচুন এবং অন্যকে বাঁচান। এটাই তো মানব জীবনের ধর্ম!

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Share This Article
Leave a comment